বর্তমান পৃথিবীতে স্থূলবুদ্ধি সম্পন্ন; অতিকায় চালাক প্রকৃতির, নির্বোধ কিছু লোক, তাদের কার্যকরণে দেখানোর চেষ্টা করে, ইসলাম এবং জ্ঞান দুটি দুই মেরুর জিনিস। প্রকৃত বিষয় হলো; তাদের ধারণা এবং বাস্তবতা মাঝে যোজন-যোজন ফারাক।
আমাদের নিজেদের চিন্তায়ও কিছুটা ঘাটতি আছে, বিজ্ঞানের কোন বিষয় ইসলামের সাথে না মিললে, আমারা অনেকেই খুব হতাশ হই। আর, যখন বিজ্ঞানের কোন থিউরি ইসলামের সাথে মিলে যায়, তখন খুশীতে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলি, ইসলাম খুবই সাইন্টিফিক ধর্ম।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আমাদের গৌরবময় স্বর্ণালি ইতিহাস কে খুব কম-ই জানে। যার ফলে যেকোনো আবিষ্কার কে আমরা তাদের আবিষ্কার বলে বিশ্বাস করি।যেমন, সেদিন একজন প্রশ্ন করল, আচ্ছা আপনি ওদের এত বিরোধিতা করেন, অথচ তাদের দেওয়া মোবাইল দিয়েই কর্মোধ্যার করেন। বললাম, কাণ্ডারি হে, ইতিহাসটা একটু ভালো করে ঘাটা উচিত। গত কয়েকদিন আগে সমুদ্রের নিচ থেকে মোবাইল সাদৃশ্য একটি বস্তু হস্তহত হয়।উদ্ধার পরবর্তী বিজ্ঞদের ধারণা, বস্তুটি আজ থেকে ৮০০ বছর আগের। যখন মোবাইল সম্পর্কে কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। অর্থাৎ, যখন এর আবিষ্কার হয়েছিল, তখন পৃথিবীর কর্ণধার ছিলাম আমরাই। কারণ, আজ থেকে ৮০০ বছর আগে আমরাই এ পৃথিবী জ্ঞানের আদলে শাসন করেছি।
জ্ঞান যে মুসলমানদের হারানো গৌরব, এটা আজ আমরা ভুলতে বসেছি। আজকের জ্ঞান এর প্রত্যেকটা বিভাগকেই মুসলমানরা সূচনা করে। জ্ঞানের এমন কোন সেক্টর নাই, যার সূচনা মুসলমানরা করে নাই। যারা আজকে বিজ্ঞান কে নিজেদের বলে চালিয়ে দিতে চায়, তাদের বাপ- দাদারা আমাদের থেকে জ্ঞানকে ভিক্ষা করেছিল।সেই ভিক্ষালব্ধ জ্ঞান দিয়েই, আজকে তাদের বিজ্ঞান যাত্রা!
জ্ঞান যে মুসলমানদের হারানো সম্পদ, বিজ্ঞান যে মুসলমানদের উদ্ভাবন; জ্ঞানের মূলে যে মুসলমানরা,এ বিষয়গুলোকে তুলে ধরে ১৯৬৯ সালে ওস্তাজ প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন।
জাতির দুর্দিনে নিজেদের হারানো গৌরব জানার লক্ষ্যে, মক্তব প্রকাশনের এর উদ্যোগে সেই বিখ্যাত বক্তব্যকে, “ইসলাম ও জ্ঞান” নামে বই আকারে প্রকাশ করা হলো।
আশা করি এই বইয়ের পরতে পরতে পাঠক, নিজেদের হারানো গৌরব কে হাতরাতে পারবে।
জন্ম ও পরিবার:
প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ১৯২৬ সালের ২৬ অক্টোবর তুরস্কের সিনপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মোহাম্মদ সাবরি এরবাকান। ছিলেন তুরস্ক সরকারের বিচারপতি। মায়ের নাম খামের।
শিক্ষাজীবন:
কায়সেরির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। সেরা ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তুরস্কের সর্ববৃহৎ কলেজ ‘ইস্তাম্বুল বয়েজ কলেজ’ থেকে। সমকালীন শিক্ষার পাশাপাশি তিনি তাঁর উস্তাজ, সেসময়ের প্রখ্যাত আলেম ‘মেহমেদ জাহিদ কতকু’র কাছ থেকে ইসলামী শিক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। ১৯৪৩ সালে উচ্চমাধ্যমিকে অসাধারণ ফলাফল অর্জন করে ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
কর্ম ও অবদান:
১৯৪৮ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং স্নাতক শেষ হতে না হতেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষানবিশ ও সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তুরস্কের মোটর উৎপাদনের জন্য তিনি ২৫০ টি মোটরের সমন্বয়ে নতুন একটি মোটর তৈরি করেন এবং সেটির উপর তিনি তার চযউ এর থিসিস তৈরি করেন। তাঁর থিসিস বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ পেলে ১৯৫১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে জার্মানীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অধপযবহ ঞবপযহরপধষ টহরাবৎংরঃু-তে গবেষণার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য প্রতিষ্ঠিত উঠখ গবেষণা কেন্দ্রে সেসময়ের বিখ্যাত প্রফেসর স্কিমিদ (ঝপযরসরফঃ)-এর সাথে কাজ করেন। দেশে ফিরে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। নাজমুদ্দিন এরবাকানের “তুরস্কের প্রয়োজনীয় সব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তুরস্কের মাটিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই উৎপন্ন হবে” এই স্লোগানকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানায় দেশপ্রেমিক ২০০ জন উদ্যোক্তার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তিনি গুমুশ ইঞ্জিন ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনৈতিক জীবন ও উম্মাহর স্বার্থে কাজঃ তিনি তাঁর উস্তাজ মেহমেদ জাহিদ কতকুর পরামর্শে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মিল্লি গুরুশ আন্দোলন। উপপ্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তিনি একদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন এবং ওই একদিনেই তাঁর নেতৃত্বেই সাইপ্রাস বিজয় হয়েছিল। এছাড়াও তিনি বসনিয়া মুক্তি সংগ্রামে আলিয়া ইজ্জেতবেগভিচকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি আটটি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে উ-৮ গঠন করেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী আলোকবর্তিকা।
মৃত্যু:
২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আল্লাহর এই প্রিয় বান্দা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান তাঁর রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান আর রেখে যান তাঁর স্মৃতি ও প্রেরণার রঙের তুলি।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.