মানবসভ্যতার প্রাচীনকাল থেকে হাজার হাজার বছর স্বর্ণ ও রুপার মুদ্রাই শাসন করেছে পৃথিবী। কারণ সবদিক থেকে একমাত্র সোনা ও রুপারই সেই শক্তি, ক্ষমতা, যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য আছে, যা ‘অর্থ’ হিসেবে টিকে থাকার জন্য জরুরি। ইউরোপে ব্যাংকব্যবস্থার উত্থানের পর কাগুজে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় বিশ্বব্যাপী; তবে সেটা ছিল গোল্ডস্ট্যান্ডার্ড ভিত্তিক-ই। দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক মুদ্রাব্যবস্থায় নানান পরিবর্তন আসে। নতুন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আমেরিকার উত্থান ঘটে; ‘ব্রেটন উডস’ সিস্টেমের আওতায় বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের একক আধিপত্য কায়েম হয়। পৃথিবীর সকল মুদ্রা হয়ে যায় ডলার নির্ভর আর ডলারের পেছনে মজুত থাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ। কিন্তু ১৯৭১ এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ঘোষণা দিয়ে ডলারের বিপরীতে থাকা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড বাতিল করে দিলে ডলার হয়ে যায় এক টুকরো কাগজ মাত্র। ডলারের প্রতি পৃথিবীবাসী আস্থা হারিয়ে ফেলে আর ডলারও পড়ে যায় হুমকির মুখে। একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘পেট্রো-ডলার চুক্তি’ ডলারের প্রাণ ফিরিয়ে দেয় আরও কিছুদিন বাঁচার জন্য।
পেট্রোডলার চুক্তি কিছুদিনের জন্য ডলারকে বাঁচিয়ে রাখলেও বিশ্বনেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি। তখন থেকেই শক্তিশালী দেশগুলো ডলারের দাদাগিরিকে চ্যালেঞ্জ করে আসছে; আর সেটা করছে স্বর্ণের মজুত বৃদ্ধির মাধ্যমে। কারণ সবাই জানে, স্বর্ণই সত্যিকারের অর্থ, যার কাছে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ থাকবে, বৈশ্বিক মুদ্রাব্যবস্থায় তার আধিপত্য চলবে।
আমেরিকান আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ ও নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার লেখক জেমস রিকার্ডস তার শ্বাসরুদ্ধকর বিবরণে বৈশ্বিক অর্থনীতির এমন অনেক বিষয় এখানে তুলে ধরেছেন, যা অর্থনীতির ছাত্র-শিক্ষরাও সাধারণত জানেন না, বা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। স্বর্ণভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা কেন প্রয়োজন তার যৌক্তিকতা তুলে ধরার পাশাপাশি এই ধারণার বিরোধীতাকারীদের যুক্তিগুলোকে তিনি ধরে ধরে খণ্ডন করেছেন । তিনি সতর্ক করে দেখিয়েছেন যে, গত শতকে দুই-দুইবার বিশ্ব-অর্থনীতি কীভাবে ধ্বংসের মুখে পড়েছে এবং কেন এখন সেটা তৃতীয়বারের মতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। একজন অর্থ ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে আসন্ন সংকট মোকাবেলার জন্য কিছু কার্যকরী প্রস্তাবনাও তিনি উল্লেখ করেন, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সম্পদের কিছু অংশ স্বর্ণে প্রতিস্থাপন করে সংরক্ষণ করে রাখা।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.