কাহিনি সংক্ষেপ:
রামতারণের অভাবের সংসারে অন্ধের যষ্টি নিধিরাম রায়চৌধুরী। নামের ভার আর বংশীয় ব্রাহ্মণ পরিচিতি যতই প্রবল মনে হোক না কেন দারিদ্র্যের পরাকাষ্ঠায় ধূসর জীবনে রঙের আঁচড় লাগেনি কখনও। মোক্তারি পাশ করে সবেমাত্র কর্মস্থলে পদচিহ্ন রাখতে শুরু করেছে নিধিরাম। অভিষেকেই হাকিমের স্নেহভাজন হিসেবে তার সংসর্গ আদালতপাড়ায় জন্ম দেয় নীরব রটনা। এর নেপথ্যে রয়েছে নিধিরামের প্রতিবেশী লালবিহারী চাটুয্যের কন্যা ষোড়শী মঞ্জু। লালবিহারী চাটুয্যেও পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন মোক্তার। সময়ের পালাবদলে প্রতিপত্তি লাভের পাশাপাশি গ্রামীণ জীবনে তিনি হয়ে ওঠেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। পারিবারিক, মানসিক তথা সামাজিক জীবনে ধনী-দরিদ্রের এই অর্থনৈতিক বৈপরীত্যের টানাপোড়েনকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শব্দের তুলিতে অঙ্কণ করেছেন দুই বাড়ি শীর্ষক উপন্যাসে।
~বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর দুই বাড়ি উপন্যাসটি কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত না হয়ে সরাসরি গ্রন্থ আকারে সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ সালে। এরপরে ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে উপন্যাসটি প্রকাশ করে সিগনেট প্রেস। যা সিগনেট সংস্করণ নামেই পরিচিত। এই সংস্করণটি প্রকাশের পরেই মূলত বিভূতিভূষণের ভক্তকূলের মাঝে এই উপন্যাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সিগনেট সংস্করণের প্রবর্তক সিগনেট প্রেসের বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ না করলেই নয়। সিগনেট প্রেস ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা প্রকাশনাশিল্পে আধুনিকতার প্রবর্তক দিলীপকুমার গুপ্ত ও নীলিমা গুহঠাকুরতা এই প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। যেখান থেকে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ‘দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ সহ বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় অসংখ্য বই প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানেই সত্যজিৎ রায় তাঁর কর্মজীবনের শুরুতে ভিজ্যুয়াল ডিজাইনার ছিলেন এবং অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ অলঙ্করণ করেছেন।
দুই বাড়ি উপন্যাসটি বিভূতিভূষণের এমন একটি উপন্যাস যা নিয়ে পাঠকমহলে আলোচনা খুব একটা চোখে পড়ে না। সাদা চোখে উপন্যাসটিকে একটি প্রেম কাহিনি কিংবা ভালোবাসার টানাপোড়নের গল্প বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু এই উপন্যাসের মাধ্যমে লেখক সমাজের দুই স্তরের মানুষের জীবনযাত্রার পার্থক্য প্রকটভাবে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে তুলে ধরেছেন আদালত প্রাঙ্গনের নিত্য ঘটনাচিত্র। ছোট কলেবরের এই উপন্যাসটি পাঠককে জীবন সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবনার খোরাক যোগাবে। পাশাপাশি বিভূতিভূষণের প্রকৃতিপ্রেম ও লেখনশৈলী পাঠককে নিয়ে যাবে অন্য এক ভুবনে।
বর্তমানে বিভূতিভূষণের বই নিয়ে অনেক প্রকাশনী কাজ করলেও এই বইটি বাংলাদেশে সেভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছায়নি। মূলত সেই জায়গা থেকেই বইটি প্রকাশের পরিকল্পনা করা হয় গত বছর। তবে বইটি প্রকাশের পরিকল্পনা একটু ভিন্নতর ও সুদূরপ্রসারী ছিল। তবে তা তরান্বিত করা সম্ভব হয়েছে আনন্দ ভাই ও শারমিন আক্তার জেসি আপুর কারণে। বিশেষ করে বইয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচ্ছদ ও স্কেচ খুব দ্রুত করে দেওয়ার জন্য আনন্দ ভাইকে ধন্যবাদ।
সমাজের স্তরভেদ ও আদালত প্রাঙ্গনের নানান ঘটনাকে খুব সূক্ষ্মভাবে একই সুতোয় বাঁধার চেষ্টা করেছেন লেখক। এমনই কিছু অনন্য উপাদানে ভরপুর সুখদুঃখের মোড়কে মোড়ানো গ্রামীণ ও মফস্বল পরিবেশের আলোকে লেখা বিভূতিভূষণের এই উপন্যাসটি আশা করি পাঠকদের মনে নতুন করে জায়গা করে নিবে। ~
শুভেচ্ছান্তে
মো. তাহমিদুর রহমান
সতীর্থ নিবাস, রাজশাহী।
১৪ এপ্রিল, ২০২৪
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.