জীবনে যারা বিশেষ কিছু হতে চান, এই বইটি তাদের জন্য। বইটির পরতে পরতে রাসূল ﷺ এর জীবনের এমন সব ঘটনা থাকবে, যেগুলো মানুষকে অনুপ্রেরণা দিবে দারুণভাবে। অবলীলায় তারা তাঁকে গ্রহণ করবেন অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে। বইটিতে তাঁর নবী হওয়ার আগের জীবন বেশি গুরুত্ব পাবে। আমরা দেখব শিশুকাল থেকে কীভাবে তিনি নিজের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলেছেন। টিনএজ বয়সের চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেছেন। তরুণ বয়সেই কীভাবে সমাজে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সাধারণত জীবনীগ্রন্থগুলোতে যেভাবে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করা হয়, এখানে ইচ্ছে করেই সেগুলো সেভাবে বর্ণনা করা হয়নি। এই বইয়ে আমাদের ভাষা অনেকটা ঘরোয়া। অনেকটা সাদাসিধা। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে রাসূল ﷺ এর ব্যাপারে যেসব জীবনী লেখা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগে দুটো জিনিস হামেশা পাওয়া যায়; রাসূলর ﷺ ৪০ বছরের পরের জীবন আর পাঠকদের মধ্যে তাঁর ব্যাপারে সম্ভ্রম জাগানো। কিন্তু এ ধরনের লেখনীতে তরুণ পাঠকেরা নিজেদের কমই খুঁজে পায়। বইগুলোতে তাঁকে এতটাই নিখুঁত পুরুষ হিসেবে তুলে ধরা হয় যে, অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করতে বেগ পেতে হয়। তরুণরা অনেক সময়ই তাদের জীবন ঘনিষ্ঠ সংকটের সাথে রাসূল ﷺ জীবনী মিলিয়ে নিতে পারে না। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য আছে ভালো ভালো উদাহরণ।’ (৩৩:২১) কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, রাসূল ﷺ এর সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক যতটা কাছের হওয়া উচিত, ততটা হয় না। শিশুরা কখনো কল্পনাও করতে পারে না তাদের প্রিয় রাসূল ﷺ একসময় তাদের মতোই শিশু ছিলেন। তিনি খেলেছেন, দৌড়াদৌড়ি করেছেন। টিনএজাররা কখনো ভাবেই না যে, তারা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়ে দিন পার করছে, রাসূল ﷺ কে ঠিক এমনই কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাদের তরুণরা জানে না কীভাবে তিনি পরিবর্তনের সাথে খাপ খেয়ে নিয়েছেন, কীভাবে তিনি অচলবস্থার নিরসন করেছেন। এই বইয়ে শিশু মুহাম্মাদ, কৈশোরের মুহাম্মাদ এবং নবুওয়তের আগের যুবক মুহাম্মাদকে দেখবেন ইনশাআল্লাহ।
নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার পাত্র। আমরা প্রিয় নেতাকে জীবনের চেয়েও ভালোবাসি। কিন্তু আমরা তাঁকে এমন সম্ভ্রম-জাগানিয়া নিখুঁত মানুষ হিসেবে তুলে ধরি যে, আমাদের সময়ে তাঁকে অনুসরণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা কেন যেন রাসূল ﷺ কে কঠিন করে উপস্থাপন করতে চাই। এই বইতে পাঠক তাঁর সম্পর্কে এক নতুন চিত্র পাবেন। তারা দেখবেন কীভাবে তিনি আমাদের মতোই, আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, সেগুলোর মোকাবিলা করেছেন। সেগুলোর মোকাবিলায় তিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করবেন। পাঠক আরও খেয়াল করবেন যে, এখানে নিজের জীবন উন্নয়নের ধাপগুলোর বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চিরাচরিত বইগুলোর বর্ণনাভঙ্গীতে অনেক সময় মনে হয়, আমরা কী আর তাঁর মতো হতে পারব? এ ধরনের হীনমন্যতা দূর করে বাস্তব পদক্ষেপ দেখিয়ে দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। পৃথিবীতে মানুষ যতটা নিখুঁত হতে পারে নিঃসন্দেহে রাসূল ﷺ তা-ই ছিলেন। কিন্তু এটা সত্য যে তিনি ছিলেন মানুষ। মানুষ হিসেবে অনেক সংকট ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। এসব ইস্যুতে প্রিয় নবিজী আর আমাদের মাঝে দারুণ কিছু মিল আছে। আমরা সহজাত উপায়েই নবিজীকে অনুসরণ করতে পারি।
Mansura Chowdhury –
ড.হিশাম আল আওয়াদির ‘Muhammad: How He Can Make You Extra-Ordinary’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ হলো বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ (স)বইটি।এখানে মোহাম্মদ(স)এর সীরাত উপস্থাপন করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে।সচরাচর সীরাত বইগুলোতে আমরা রাসূল(স)নবুওতের জীবন সম্পর্কে ধারণা পাই,নবুওতের পূর্ববর্তী জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানতে পারিনা।এই বইতে রাসূলের নবুওত লাভের পূর্বের জীবনকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্ভ্রমজাগানিয়া রাসূলের(স)পাশাপাশি এক অতিপরিচিত মানুষ রাসূল (স)এর সাথে।
বইটি সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত।রাসূল(স)এর মরুজীবন,দুধ মা হালিমা ও মা আমেনার কোলে রাসূলের বেড়ে উঠা,শিক্ষা,বর্ধিত পরিবার দাদা-দাদি,চাচা-চাচীদের তাঁর প্রতি করা সুআচরণ,যার ফলে রাসূল (স)মানসিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্বের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়েছিল ইত্যাদি বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে।পাশাপাশি লেখক প্যারেন্টিং বিষয়ে বেশ কিছু টিপস শেয়ার করেছেন যা থেকে শিশু ও সন্তান প্রতিপালনের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।এখানে রাসূলের টিনেজার বয়সের নানা ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে,কিভাবে তিনি বন্ধু,পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন,প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও স্রোতের বিপরীতে চলার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইত্যাদি লেখক উল্লেখ করে টিনেজারদেরও তেমন আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।আছে রাসূলের তারুণ্যের জীবন,নেতৃত্ব দানের অপূর্ব যোগ্যতার গল্প,সমাজের ভালো ভালো কাজে তার অগ্রণী ভূমিকা,মানুষের কাছে সৎ ও বিশ্বস্ত হয়ে উঠার কাহিনী যা পাঠে তরুণরাও খুঁজে পাবেন নিজেদের আখলাক গঠন, কর্মপদ্ধতি ও কৌশলের শিক্ষা।রাসূল(স)নবুওতের পর চল্লিশ ও পঞ্চাশ বছর বয়সে কেমন ছিলেন,জীবনের শিক্ষাগুলো পরিণত বয়সে তাকে কতটা সফল ও মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে গড়ে তুলেছে ইত্যাদি লেখক পর্যালোচনা করেছেন অত্যন্ত চমৎকারভাবে যা সাধারণ মানুষদের জন্য সহজেই অনুসরণীয়।
ভাললাগা ও মন্দলাগাঃ রাসূল(স)কে পাঠকের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন লেখক সফলভাবেই করেছেন।তাঁর শৈশব,কৈশোর ও তারুণ্যের জীবনের নানা দিক উন্মোচন করেছেন যা পাঠকের জন্য চিন্তার খোরাক জোগায়।
মন্দলাগা বলতে অনুবাদের মান সাদামাটা,হৃদয়স্পর্শী মনে হয়নি।রাসূল(স)কে যতটা না বইয়ের মাঝে পেয়েছি তার চেয়ে বেশি রাসূলের পরিবার-পরিজন,চারপাশের মানুষের তাঁর সাথে করা আচরণগুলো তুলে ধরা হয়েছে,যা আমাদের জন্য কতটা আদর্শের বিষয় তা প্রশ্নের দাবি রাখে।নবুওতের পূর্ববর্তী জীবনকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে অথচ রাসূল(স)এর শিশুদের প্রতি,টিনেজারদের প্রতি আচরণ কেমন ছিল,তার সন্তানদের কিভাবে গড়ে তুলেছিলেন,কিশোর-তরুণদের সাথে তার ব্যবহার,তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান ইত্যাদি বিষয়গুলোই মনে হয় বেশি উপকারী হতো।তাছাড়া বইয়ের বেশিরভাগ অংশই লেখকের ধারণাপ্রসূত মনে হয়েছে।আরো কিছু বিষয় আছে যা পাঠকটু লেগেছে।
বইটি কাদের জন্য?বইটি অবশ্যই শিক্ষণীয়।পিতা-মাতা সহ,টিনেজার,তরুণরাও এতে অনেক বাস্তবধর্মী টিপস পাবেন,যা প্রয়োগ করে একজন সফল ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠা যাবে।ইনশাআল্লাহ।
প্রচ্ছদ,বাঁধাই ৪/৫।
Al Shaharia kabir Prince –
আমরা সবাই নবিজি (সাঃ) সমন্ধে জানি। তার জীবনী যে সবশ্রেষ্ঠ আদর্শ তা কারোই অজানা নয়। এজন্য তাকে অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু তাকে অনুসরণ করবো কিভাবে? হ্যাঁ তার জন্য অবশ্যই তার জীবনী পড়তে হবে, জানতে হবে তার আদর্শ। কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে সেই ১৪০০ বছর আগে সেই জীবনের সাথে আজকের এই আপনার জীবন তো অনেক ভিন্ন। তাহলে??
একটা উপায় হতে পারে তার জীবনের সাথে আপনার জীবনের তুলনা করা। অর্থ্যাৎ কিনা আপনি তার জীবনের বিভিন্ন দিক নিজের জীবনের সাথে মিল করবেন। হ্যাঁ, এটা সবচেয়ে সহজ উপায়। তবে মিল করবেন কিভাবে? কিছু কিছু বিষয় আপনি নিজেই মিল করতে পারবেন। তবে তা কিছু তার ৬৩ বছরের জীবনের সাথে আপনার জীবনের তুলনা বা মিল করা সহজ নয়। কিন্তু এখানে সেই কাজটি করেছেন ড. হিশাম আল- আওয়াদি। তিনি এই বইটিতে দেখিয়েছেন কিভাবে আপনার আমার এই জীবনের সাথে রাসুল (সাঃ) এর জীবনের তুলনা করে তার মতো হওয়া যায়, কিভাবে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ এই আদর্শকে আপনার আমার জীবনের সাথে মিলিয়ে তার মতো স্মার্ট হোয়া যায়।
তবে বইটি কাদের জন্য? হ্যাঁ এখানে তিনি দেখিয়েছেন রাসুল (সাঃ) বাল্য, কিশোর, তরুণ, চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর বয়সী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে। সেইসাথে বলেছেন তৎকালীন আরবের পরিবার, সমাজ, দেশ সমন্ধে। ফলে বইটি সব বয়সী মানুষ সমান ভাবে পড়তে পারবে। আবার এটি সব বয়সীদের জন্য উপযুক্ত। তাই যারা রাসুল (সাঃ) এর মতো স্মার্ট হতে চান, চান নিজকে বদলাতে তাদের জন্য অবশ্যই উপযুক্ত এই বই