“মওলানা রূমীর দেশে” শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ফাহমিদ উর রহমানের এক রূহানী সফরনামার বয়ান, যেখানে তিনি উসমানী সালতানাতের জালাল (মহত্ত্ব) আর সুফী সুলতান রূমী ও তাঁর মিরাসের জামাল (সৌন্দর্য) কে একত্রে আবিষ্কার করেছেন, যার মনোজ্ঞ বর্ণনা এসেছে তাঁর এই সফরনামায়।
বর্ণনাভঙ্গির দিক থেকে ফাহমিদ স্যারের এ কিতাব আল্লামা মুহাম্মদ আসাদের “মক্কার পথ” এর সাথে সাদৃশ্য রাখে। একটি গাছের পাতা পড়ার আওয়াজ, কিংবা কফির ধোয়া, অথবা তাকে বহনকারী উটের ক্লান্তিও যেমন আসাদের চোখ এড়ায়নি, তেমনি মেভলাভী নাচ, তুর্কিশ কুজিন, উসমানীদের স্মৃতিচিহ্ন আর সুলতান ফাতিহ মুহাম্মদের ঐশ্বর্য আর রূমীর রূহানী বায়ুর ফল্লুধারাকে সমানভাবে ধারণ করেছে ফাহমিদ স্যারের কলম।
ওরহান পামুকের দ্বন্দ্ব, কিংবা কোন এক তুর্কি ড্রাইভারের আতিথেয়তা, উসমানীদের অসাধারণ স্থাপত্য, পাথরের মাঝে রূহকে অঙ্কিতকারী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যবিদ মিমার সিনানের স্মৃতি, সুলতান সুলাইমানের ঐশ্বর্যশিক প্রভাব, কিংবা একমেক-বাকলাভা-আইরানের স্বাদ,আর উসমানী সংস্কৃতি আর মিনিয়েচার আর্টের বর্ণনা যখন ফাহমিদ স্যার এক দক্ষ শিল্পীর ন্যায় রঙের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে আঁকতে থাকেন, তখন হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের এক প্রান্তে বসে আমিও যেন হাটতে থাকে সুলাইমানিয়া- ফাতিহ মহল্লাসি আর ইস্তাম্বুলের সে গলিগুলো দিয়ে, অবলোকন করতে থাকি সে শহরকে যা এককালে গোটা দুনিয়াতে উচ্চকিত করে রেখেছিলো হক আর আদালতের ঝাণ্ডাকে।
ফাহমিদ স্যারের বিস্তীর্ণ পড়াশোনা স্বভাবতই বইটিকে সুখপাঠ্য করেছে।
প্রতিটি স্থানে সে জায়গার ঐতিহাসিক বিবরণ, একজন দক্ষ স্থাপত্যবোদ্ধার ন্যায় প্রতিটি স্থাপত্যকে বিশ্লেষণ আর সর্বোপরি তুরস্কের হৃদয়ে ঢোকার যে অন্তহীন আবেগ তা তুলনাহীন! বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য, আর বিভিন সময়কার যুদ্ধবিগ্রহের রক্তাক্ত ইতিহাস পড়ে পাঠক যখন ক্লান্ত হয়ে যাবেন, তখন তাঁর অস্থির হৃদয়কে প্রশান্ত করে ইশক আর মুহাব্বতে আপ্লুত করে তুলবে মেভলেভী নাচ, নুরুদ্দীন জাররাহী তেক্কের সে তরুণ আলেমের হৃদয়গ্রাহী কন্ঠ, সিরীয় সে বৃদ্ধের রূপার ন্যায় অশ্রুমাল্য।
রূমীর দেশকে বুঝতে হয় তাঁর কথার মতোই, যাকে অনুভব করতে হয় মুহাব্বত আর নীরবতায়, যাকে শব্দ দিয়ে বুঝা যায়না।
কেননা,
Silence is the language of God, All other is poor translation.
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.